ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সহজ উপায়
ধূমপান ছেড়ে দিতে হলে প্রথমেই তাকে একটা দিন ঠিক করতে হবে, যে দিন সে আনুষ্ঠানিকভাবে ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং এই তারিখটি আগামী পনেরো দিনের মধ্যে হওয়া চাই। ধরে নেওয়া যাক মাসের 6তারিখে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার দিন ঠিক হয়েছে, তাহলে মাসের 1 তারিখ থেকে একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
প্রথম দিন
কেন ধূমপান ছেড়ে দিতে চায় তার একটা সম্পূর্ণ তালিকা বানাতে হবে যাতে পরবর্তীকালে ধূমপানের ইচ্ছা প্রবল হলে বারবার সেই তালিকাটা দেখতে হবে। তাহলে ধূমপানের ইচ্ছা কিছুটা প্রশমিত হবে। প্রথম দিন থেকেই ধূমপানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা এবং সঙ্গে রাখা বন্ধ করে দিতে হবে।
দ্বিতীয় দিন
এই দিনকে সবাইকে জানাতে হবে যে একটা নির্দিষ্ট তারিখ থেকে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছেন। বাড়ি, অফিস, বন্ধু এমনকি সোসাল মিডিয়াতো ঘোষণা করতে পারেন এবং তাদেরকে বলুন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে সহায়তা করতে তাতে সবার সামনে ধূমপান করতে আপনি লজ্জিত হবেন। এতেও আপনার ধূমপানের ইচ্ছা কিছুটা প্রশমিত হবে। এই দিন আর একটা তালিকা বানাতে হবে যে, কোন সময় এবং কোন স্থানে সব থেকে বেশি ধূমপান করেন এবং কোন কোন বন্ধু বা পরিজনের সাথে আপনি ধূমপান করেন। এখানে আরও একটা তালিকা বানানো দরকার ধূমপান ছাড়া আর কোন কোন বিষয়ে আপনার আরাম বা মানসিক শান্তি আসে অর্থাৎ ব্যায়াম, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ইত্যাদি. আর একটা তালিকা হবে যেটা ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর আপনার দরকার হবে। যে সময় আপনি ধূমপান করতেন তার পরিবর্তে আপনি কিছু মুখে রাখতে হবে যেমন চুইনগাম, লজেন্স, মৌরি, লবঙ্গ যা আপনার পছন্দ সে সব জিনিস আপনার কাছে রাখতে হবে. আর একটা লিস্ট হবে যে কারনে আপনি ধূমপান করতেন, যেমন ঘুম থেকে দেরী করে ওঠা, বেশী রাত করে শুতে যাওয়া, এই সমস্ত অভ্যাস আপনাকে বদলাতে হবে যে কারণে আপনার ধূমপান করতে হচ্ছা হয়। আরও একটা লিস্ট বানান যে সময় আপনি ধূমপান করতেন সেই সময় আপনি কি করবেন।
তৃতীয় দিন
এই দিন আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন যারা আপনার খুব কাছের মানুষ। এই সময় যারা আপনাকে পজেটিভ চিন্তা দেবে। তাদেরকে বলুন আপনার পক্ষে ধূমপান ছাড়া একটু কঠিন, তারা এই সময় আপনাকে যেন মানসিকভাবে সাহায্য করে। দরকার হলে এই সময়ে আপনি অন্য কোথায় ঘুরতে চলে যান। আপনি এইভাবেও ভাবতে পারেন যে, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর আপনার যে খরচ বেঁচে যাবে সেটা আপনি কিভাবে খরচ করবেন।
চতুর্থ দিন
এই দিন আপনি আপনার সমস্ত জামা কাপড়, বিছানার চাদর ঘর গাড়ি সমস্ত কিছু ধুয়ে মুছে ফেলুন যাতে কোথা থেকেও ধূমপানের গন্ধ না আসে।
পঞ্চম দিন
এই দিন আপনি এক জায়গায় বসে চিন্তা করুন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর আপনার কি কি উপকার হবে। এই দিন নিজের দাঁত আর মুখ খুব ভালো করে ধুয়ে নিন যাতে কোনো ভাবেই ধূমপানের গন্ধ না পাওয়া যায়। ধূমপানের যা সামগ্রী যেমন অ্যাসট্রে, লাইটার সমস্ত কিছু সরিয়ে ফেলুন।
ষষ্ঠ দিন
এই দিন আপনার ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার দিন, সমস্ত খারাপ অভ্য়াস ছেড়ে দেওয়ার লিস্ট যা আপনি আগের তৈরি করেছেন, সেটা দেখুন এবং সেগুলো কার্যে রূপান্তরিত করুন। আপনি কোথায় ঘুরতে চলে যান। সারা দিন নিজেকে ব্যস্ত রাখুন. ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার প্রথম পাঁচ-ছয় দিন একটু কঠিন সময় কিন্তু দু-সপ্তাহ পরে আপনি যে কখনো ধূমপান করতেন সেটাই ভুলে যাবেন। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর নিজের মধ্যে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা অনুভব করার চেষ্টা করুন।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল একবার ধূমপান করে নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা. বারবারই মনে হবে একটু ধূমপান করে নিই এরপর আর নেব না কিন্তু একদমই এটা করা যাবে না। ধূমপানের এই তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে যদি কিছু্ক্ষণের জন্য সহ্য করা যায় তাহলে ধীরে ধীরে এটা প্রশমিত হয়ে যাবে। এই সময় আপনাকে অল্প অল্প করে মুখের ভিতর রেখে রেখে জল খেতে হবে। এই সময় আপনার গভীর নিশ্বাস নিতে হবে এবং কিছু্ক্ষণ ধরে রেখে তা ছেড়ে দিতে হবে, নিজেকে যে কোনো কাজ ব্যস্ত করে রাখতে হবে।
কি করবেন আর কি করা যাবে না
– একবারও ধূমপান করা যাবে না।
– সেই সব বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে হবে যাদের সাথে থাকলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে।
– অ্যালকোহল পান করা একদমই চলবে না।
– রাতে কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে কারণ রাতে ঘুম কমে গেলে তখন ধূমপানের ইচ্ছা প্রবল হবে।
– এর সাথে আপনাকে বারবার সেই সব তালিকা গুলো দেখতে হবে যা আপনি আগে বানিয়েছিলেন।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর কি কি লক্ষণ দেখা যেতে পারে
– এই সময় বিরক্ত, রাগ হতে পারে।
– খুব কাশি হতে পারে।
– রাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে, এই সময় সারা দিন ক্যাফিন জাতীয় কিছু গ্রহন না করাই ভাল।
– নাক থেকে জল পড়তে পারে।
– মাথা ঘোরা, মাথা যন্ত্রনা হতে পারে।
– মনোযোগ কমে যেতে পারে।
– কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
– গ্যাস হতে পারে, অতিরিক্ত খিদে পেতে পারে, মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে, ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভবনা থাকে।
এই সমস্ত সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক। একটু বেশি পরিমানে জল, ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি পরিমানে খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
রক্তে নিকোটিনের পরিমান হঠাৎ কমে গেলে ধূমপানের এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। বাজারে এর সাপোর্টিং অনেক কিছু পাওয়া যায় যেমন নিকোটিন চুইনগাম, প্যাচেস, পাফ। এসব আপনি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ধূমপানের এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা খুব সাময়িক কিছু্ক্ষণ সহ্য করতে পারলেই ধীরে ধীরে এটা চলে যাবে।
এছাড়াও ডাক্তারের সাহায্য নিতে পারেন। অ্যান্টি নিকোটিন অনেক রকম ওষুধ আছে তাতে কখনোই নিকোটিন অভাব বোধ হবে না কিন্তু আপনি ধীরে ধীরে ধূমপান ছেড়ে দিতে সমর্থ হবেন।
তথ্যসূত্র – ইউটিউব ও গুগল