জ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে, ১৪৯৩ সালে দুই চাকার সাইকেলের প্রথম উৎপত্তি হয়। বিশ্বজুড়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে এবং শরীরচর্চার বিষয় হিসেবে সাইকেল চালানো ভীষণ প্রচলিত। একক এবং গ্রুপ সাইক্লিং— দুইয়েরই প্রচলন রয়েছে। সাইকেল চালানো বেশ সহজেই শেখা যায় এবং দেখা যায় একবার শিখে ফেললে অনভ্যাসের কারণেও এটা ভুলে যাওয়ার নয়। সাইক্লিং শিখতে হবে শুধু মনে ইচ্ছে এবং সাহস নিয়ে। দুই চাকার এই যানে চড়ে বেরিয়ে পড়তে হবে। শিখে নিতে হবে ভারসাম্য বজায় রাখার পদ্ধতি। মাথায় চোট আঘাত থেকে বাঁচতে অত্যাবশ্যক হল হেলমেট পরা।

সাইকেল পরিবেশ বান্ধব যান

সাইকেল কখনোই বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলদূষণ না করে । অত্যন্ত কম জায়গায় সাইকেল রাখা যায়! সাইকেল ব্যবহার করে জ্বালানি সাশ্রয় তো হয়ই পাশাপাশি কমবে অনেক পথ দুৰ্ঘটনাও।

জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত পেট্রোল- ডিজেল পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি কমে আসছে পেট্রোল-ডিজেলের জোগান। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে এই দু’চাকার যানটির খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গিয়েছে ৫ মাইল সাইকেল চালিয়ে রোজ কাজের জায়গায় পৌঁছলে, প্রতিবছর প্রায় ১০০ গ্যালন কার্বন-ডাই-অক্সাইড কম তৈরি হবে।

স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস জন্য সাইকেল চালানো

একবার ভালোবেসে ফেললে সাইকেল চড়া ছাড়া যায় না । সাইকেলের নেশা, বিভিন্ন নেশার সামগ্রীর থেকে কিছু কম নয়। সাইক্লিং-এর সময় শরীরের নীচের অংশ বেশি যেমন ব্যবহৃত হয় উপরের মাংসপেশিরও রক্ত সঞ্চালন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বেশি অক্সিজেনযুক্ত রক্তে সতেজ করে তোলে। গ্লুটিয়াস, হ্যামস্ট্রিং, কোয়াড্রিশেপস পেশির ক্ষমতা বেড়ে যায়৷ এটি একপ্রকার কার্ডিও এক্সারসাইজ কারণ শরীরে রক্তস্রোত বেড়ে যায়, যা দ্রুতগতিতে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছয় এবং সেখান থেকে আবার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাইক্লিং-এর অবদান অনস্বীকার্য।

দ্রুতগতির স্ট্রেসফুল জীবনে কিছুটা মুক্ত আনন্দের ছোঁয়া এনে দেয় সাইকেল চড়া। শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সাইক্লিং জোগায় মানসিক বিনোদনও! ডিপ্রেসন, অ্যাংজাইটি, অনিদ্রার অন্যতম রেমিডি হল সাইক্লিং। সাইক্লিং বজায় রাখে শরীরের নমনীয়তা।

সাইকেল চালানো ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষেও উপকারী

আপনি যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন বা সুস্থ হয়ে গিয়ে থাকেন তবে সাইকেল চালানো আপনার শরীরের পক্ষে ভীষণ উপকারী। অনেক ক্যান্সার রোগী চিকিৎসার সময় কম শক্তি এবং ব্যথা অনুভব করেন, আপনার শরীরের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হবে সাইক্লিং করলে।

2019 সালের গবেষণা অনুসারে, যদি আপনার স্তন ক্যান্সার থাকে, তাহলে ক্লান্তি সহ ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

হাড়ের আঘাত, বাতে সাইক্লিংয়ের ভূমিকা

হাড়ের ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) প্রতিরোধ করে সাইক্লিং। হাঁটুর ব্যথার ব্যায়ামও সম্ভব। তাই একে বলা হয় লো ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ। দেখা গিয়েছে, নিয়মিত সাইকেল চালালে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে হাঁটুর অসুখ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল)-এর মাত্রা বাড়ায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাইক্লিং ক্যান্সার নামক মারণ রোগের ঝুঁকি কমায় প্রায় ৪৫ শতাংশ। এটি ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেশার কমাতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বয়সবৃদ্ধিজনিত জরা আসা রুখতে সাইক্লিং অপরিহার্য

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির তরফে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাইক্লিং দ্রুত বয়সবৃদ্ধিজনিত জরা আসা রুখে দিতে পারে। ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, খিদে, হজমক্ষমতা সঠিক রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সাইকেলের দামও যেমন কম ব্যবহারেও জটিলতা তেমন নেই। এমনকী সাইকেল ভাড়া করেও চালানো সম্ভব। কমে যেতে পারে যানজটের সমস্যাও। সর্বোপরি সাইকেল চালালে কমে যায় চিকিৎসার খরচ। সাইক্লিং-এ উপকৃত হবে শরীর ও স্বাস্থ্য!

হালফিলে বেশ কিছু সংস্থা তাদের কর্মচারীদের জন্য সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করেছে। সেইজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রচুর অর্থ! পৃথিবীর উন্নত দেশে রয়েছে আলাদা সাইকেল লেন। আশা করা যায়, আগামীদিনে সাইকেল লেন বন্ধ না করে, বরং আলাদা করে সাইকেল চালানোর জন্য ব্যবস্থা করবে রাজ্য ও দেশের সরকার